05 September 2018

শিক্ষক দিবসে মুর্শিদাবাদের এক আদর্শ শিক্ষকের কথা



ওয়েবডেস্ক, কথাবার্তা, বেলডাঙা, ৫ সেপ্টেম্বর : শিক্ষা আনে চেতনা ও গড়ে তোলে সমৃদ্ধ জীবনের বুনিয়াদ। আজ ৫ সেপ্টেম্বর, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন-এর জন্মদিন। এদিন সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় শিক্ষক দিবস হিসেবে। যারা শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন সেইসব শিক্ষাগুরুদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর বিশেষ দিন আজ। স্কুল, কলেজ ও সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে এই দিনটি।
     কর্ম কিংবা ছুটি সব দিনই তাঁকে দেখা গিয়েছে স্কুলে। প্রতিদিনই সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সংসার ত্যাগ করে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছেন স্কুলের প্রশাসনিক কাজে। বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বারবার তাঁর আদর্শের পরিচয় পেয়েছে বেলডাঙা তথা মুর্শিদাবাদবাসী। তিনি  আদর্শ শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম মিয়া।  ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের 'শিক্ষারত্ন ' ও ২০১৫ সালে  ভারত সরকারের 'জাতীয় শিক্ষক' পুরস্কার পেয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়া ও এলাকাবাসীর  সহযোগিতায় বাল্যবিবাহ রোধ ও নারী সচতনতার জন্য তাঁর উদ্যোগে  'মিনা মঞ্চ' গঠন করা হয়। এছাড়াও দুঃস্থ পড়ুয়া, অসুস্থ  ব্যক্তি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সাহায্যার্থে মাদ্রাসায় নিজের হাতে তৈরী করেছেন বিশেষ 'রিলিফ ফান্ড'।  উল্লেখ্য, সম্প্রতি আগস্ট মাসের ২৮ তারিখে এই ফান্ড থেকে কেরালার বন্যা কবলিত মানুষদের সাহায্যার্থে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দুই লাখ টাকা দান করেছে এই মাদ্রাসা। এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন সমাজ সচেতনতামূলক কাজের সঙ্গেও তিনি যুক্ত।

   মোঃ নুরুল ইসলাম মিয়া, ১৯৯৩ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানার এক প্রত্যন্ত এলাকা রাজখন্ড গ্রামে তিনি সাধারণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। তারপর হাই স্কুল ও কলেজ গণ্ডি পেরিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন।
জাতীয় শিক্ষক পুরস্কার গ্রহণ  

    ১৯৯৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদ জেলার  লালগোলা হাই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান এবং ২০০০ সালে ১ সেপ্টেম্বর ওই মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তারপর সেখান থেকে তিনি চলে আসেন বেলডাঙা দারুল হাদিস সিনিয়র মাদ্রাসা ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর,  যোগদান করেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে। এই মাদ্রাসার উন্নতির জন্য তিনি সার্বিক ভাবে নিজেকে নিয়োগ করেন। প্রথম শ্রেণি থেকে এমএ পর্যন্ত পঠনপাঠন হয় এই মাদ্রাসায়। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা বোডের, 'বিএ' ও 'এমএ থিওলজি'-র পঠনপাঠন পশ্চিমবঙ্গ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখানে বিএ ও এমএ থিওলজি বিভাগে ভর্তি হয়। এমনকি দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি,  কোচবিহার,  বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, হুগলি,  বর্ধমান ইত্যাদি জেলা থেকে ছাত্রছাত্রী এখানে পড়তে আসে।
বেলডাঙা বইমেলার মঞ্চে মুর্শিদাবাদের এডিএম-এর সঙ্গে

    মাদ্রাসার অনেক শ্রেণি বিভাগ ও প্রচুর ছাত্রছাত্রী, বিশাল এই কর্মকাণ্ডকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করেন। একে একে মাদ্রাসার উন্নতি জন্য নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গড়ে তোলেন আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা, ছাত্রছাত্রীদের জরুরী সাহায্যার্থে বিশেষ 'রিলিফ ফান্ড'। মাদ্রাসার কর্মসূচিতে সংযোগ করেন নারী শিক্ষার প্রাসার, বাল্যবিবাহ রোধ, বৃক্ষরোপন, রক্তদান শিবিরের মতো বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। অত:পর তাঁর এই পরিচালনা গুনে খুশি হয়ে ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার 'শিক্ষারত্ন' ও ২০১৫ সালে ভারত সরকার 'জাতীয় শিক্ষক' পুরস্কারে ভূষিত করেন। সম্প্রতি কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর বন্যাত্রাণ তহবিলে মাদ্রাসা থেকে ২ লক্ষ টাকা দান করেন। দুরদুরান্তে থেকে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের জন্য হোস্টেল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তাঁর সেই উদ্যোগে সাড়া দিতে এগিয়ে এসে ১২ শতক জমি মাদ্রাসার নামে দান করেন মির্জাপুর গ্রামে এক সহৃদয় ব্যক্তি। এই মাদ্রাসা ৫ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত  চারতলা লিফট যুক্ত বিল্ডিংএর কাজও প্রায় শেষের দিকে।

স্বরচিত বই তুলে দিচ্ছে মুর্শিদাবাদের এস পি-র হাতে 

    এখানে তিনি থেমে থাকেননি, বেলডাঙা-১ ব্লকের বইপ্রেমী মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে  প্রশাসনের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে বেলডাঙায় বইমেলার শুরু করেন। কাজের অবসর সময়ে তিনি লেখেন কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটদের জন্য ছড়া। তাঁর সাহিত্য চর্চার উঠে এসেছে সমাজে শোষিত নিপীড়িত মানুষের কথা। সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তাঁর কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে 'কিবা অপরাধ'এর মতো প্রবন্ধ গ্রন্থ। বেসরকারি বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তকের জন্য তাঁর লেখা  My English World, Easy to Way  Learning', 'ছবি ও ছন্দে বর্ণ পরিচয়' পাঠ্যপুস্তকও অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে শিশু শিক্ষার্থীর মনে। কাব্যপ্রেমী মানুষের জন্য লিখেছেন 'কিছু ব্যথা কিছু কথা ( ১ম ও ২য় খণ্ড), 'বিবেকের ডাক'। এছাড়াও লিখেছেন 'সুরে গাঁথা কিছু কথা (গজল)' ও 'ইসলাম কখনও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না' গ্রন্থ।


No comments:

Post a Comment