প্রচন্ড গরম পড়েছে। মাথার উপর সূর্য খাঁ খাঁ
করেছে। পরিবেশের তাপমাত্রা হু হু করে বাড়ছে। এমন অবস্থা সতর্ক থাকতে
হবে। নাহলে যে কোন মুহূর্তে হতে পারে সানস্ট্রোক বা হিটস্ট্রোক। বাংলায় সর্দিগর্মি।
আমাদের মগজের হাইপোথ্যালামাসে রয়েছে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। এই থার্মো-রেগুলেশন সিস্টেমের কারণে গরম খুব বাড়লেও
শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে না, একই থাকে। কোনো কারণে এই তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খর্ব হলে বাড়তে থাকে শরীরের তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বেড়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১০৫
ডিগ্রি ফারেনহাইট পার হলেই সেটা সানস্ট্রোক। এতে রোগী আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কখনো কখনো পুরোপুরি
সংজ্ঞাহীনও হয়ে যান। তপ্ত শরীরে কখনো শুরু
হয় ভুল বকা, মাথা ঘোরা, বমিবমি ভাব, খিঁচুনি, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, দ্রুত হৃদস্পন্দন। তবে এসব উপসর্গ যে সব
সময় দেখা দেবে, তা নয়। তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বড় লক্ষণ। খুব তাড়াতাড়ি শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে না পারলে সানস্ট্রোক থেকে মৃত্যু
পর্যন্ত ঘটতে পারে। তবে এরকম মারাত্মক পরিস্থিতি হয় খুব কম। বেশির ভাগ সময় সাধারণ ব্যবস্থাতেই সমস্যা মিটে যায়।
এই গরমে হঠাত্ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি থাকলে (১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এটা অবশ্যই সানস্ট্রোক। এক্ষেত্রে রোগীর শরীরের
তাপমাত্রা দ্রুত কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং ডাক্তার ডাকতে হবে। ডাক্তার না আসা পর্যন্ত বসে থাকবেন না। এক্ষেত্রে প্রাথমিক
চিকিত্সার দায়িত্ব আপনারই।
প্রাথমিক করণীয় :
* রোগীর চারপাশ থেকে ভিড় কমান, তাঁকে ছায়ায় নিয়ে যান। সম্ভব হলে ফ্যানের নিচে
রাখুন। অথবা কিছু দিয়ে তাঁকে বাতাস করতে থাকুন।
* ঠান্ডা জল দিয়ে রোগীকে স্নান করান। স্নান করানো সম্ভব না
হলে ঠান্ডা জলে কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে সারা শরীর মুছিয়ে দিন।
* জল ঢালার আগে গায়ের
জামাকাপড় যতটা সম্ভব খুলে বা আলগা করে দিন।
* মাথাতেও বরফ দিন অথবা
ঠান্ডা জল ঢালুন।
* প্রয়োজনে ওরাল স্যালাইন জল খাওয়ান। তাতে শরীরে জলে সমতা ও
ভারসাম্য বজায় থাকবে।
* হৃদস্পন্দন সচল আছে কিনা পরীক্ষা করে নেবেন।
* অন্তত দশ মিনিট পর পর
টেম্পারেচার দেখতে থাকুন। তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রি
ফারেনহাইটের নিচে না নামা পর্যন্ত তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করতে থাকুন।
* রোগী ৩০ মিনিটের মধ্যে সুস্থ না পেলে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান।
প্রতিরোধের উপায় :
* শরীর কোনো কারণে অসুস্থ
থাকলে বেশি রোদে বের হবেন না। যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন।
* বেশি গরমে বেশি
পরিশ্রমের কাজ করতে হলে একটানা না করে মাঝে মাঝে ছায়ায়, বাতাসে বিশ্রাম নিন।
* প্রচুর পরিমাণে জল পান
করুন। দেহে জলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনে ওরাল স্যালাইন খান।
* প্রচন্ড রোদে বাইরে বের
হতে হলে ছাতা ব্যবহার করুন এবং চোখে সানগ্লাস পরুন।
* হালকা রঙের ঢিলেঢালা
পোশাক পরুন। চকমকে রং এবং টাইট পোশাক এড়িয়ে চলুন।
* শশা, তরমুজ, মোসাম্বী লেবু বা কাগজি লেবুর সরবত বা পোড়া আমের সরবত খান।
* গরমের সময় খুব বেশি চা, কফি, অ্যালকোহল খাবেন না। ঝালমশলাযুক্ত ও গুরুপাক খাবার বর্জন করুন।
* রাতে যেন ভালো ঘুম হয়
সেদিকে নজর দিন।
* দিনে দুবার স্নান করার
চেষ্টা করুন। চুল ভালোভাব শুকান। ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে
ঠান্ডা জলে কাপড় ভিজিয়ে গা মুছে নিন।
*প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
( ডাঃ কুরবান আলি )


No comments:
Post a Comment