03 January 2017

শীত এলেও দেখা নেই পরিযায়ী পাখির

 ( ফাইল চিত্র )
দীননাথ মণ্ডল, বেলডাঙা, ১ জানুয়ারি ২০১৭ : এবারে ঠাণ্ডা সেভাবে পড়েনি তবুও শীতকাল চলছে এখন। প্রতি বছর কার্তিক মাসের শেষ হলে ওরা পাড়ি জমায় খালবিল, নদীনালা, মুক্ত জলাশয়ে। ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়ে আসে সাইবেরিয়া, চীন, জাপান থেকে। পৃথিবীর উত্তর মেরুর দেশগুলিতে এই সময় চলে তীব্র শীতপ্রবাহ। কোথাও আবার তাপমাত্রা মাইনাস ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়ে যায়। উত্তর গোলার্ধ থেকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ আবহাওয়ায় সুখ অনুভব করতে, হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে পাখিরা আসে রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ আর ঠাণ্ডা-রোদের মিশেল আবহাওয়ার দেশে। মুক্ত বিহঙ্গ দুটিই মানুষের মতো দেশের গণ্ডির সীমাতে বেঁধে রাখতে পারে না ওদের। সমগ্র বিশ্বই ওদের দেশ ওদের বাসস্থানে মুক্তচারণ ভূমি। এইভাবেই নীলকণ্ঠ ( ইন্ডিয়ান রোলার), কেন্টিস প্রভার, ব্রাউন ফ্লাইট, কালো হাঁস এই ধরণের ৮৫টির বেশি প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা ওড়ে আসে ভারতসহ বাংলাদেশের ভিন্ন জলাশয়ে শীতকালে। ওদের পাখনার ঝাপটায় নান্দনিক ছন্দে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস, জনপদ ও জলাশয়। খালবিলের ছোট ছোট মাছ ও জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে।
     
   প্রতি বছরের মতো এবছর তেমন পরিযায়ী পাখিদের ভিড় দেখা যাচ্ছে না বেলডাঙার ভাণ্ডারদহ বিল, সুজাপুর বাঁওড়, ডুমনি বিল, ভাবতা বাঁওড়, কাজিসাহার পাটবিল, রেজিনগরের দাদপুর বাঁওড়, এমনকি ভাগিরথী নদীর চড়ায়। বদলে যাচ্ছে সময় বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। বেলডাঙার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সোসাইটির সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, 'গ্লোবালওয়ার্মিং-এর জন্য পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ বাসস্থান উত্তর মেরুর দেশে আগের চেয়ে শীত কমেছে। ওরা সংখ্যায় আগের চেয়ে দিন দিন কমে যাচ্ছে।' পাখিদের বিচরণের মুক্তাঙ্গন জলাশয়ও কমে যাচ্ছে মাটি ভরাটের কারণে। সবুজ বনানীও ধ্বংসের মুখে। ওদের বিচরণ ক্ষেত্রে সভ্যতার লোলুপ দৃষ্টি। আবার যেসব পাখিরা আসে তারা বেশির ভাগ চোরা শিকারির কবলে পড়ে খাবার হয়ে যায়। ছররা গুলি, ফাঁস জাল, ছোট মাছের পেটে কাঁচ বিষ পুরে দিয়ে পরিযায়ী পাখিদের ধরে শিকারির দল। এই মাংস চড়া দামে বাজারে বিক্রি করে তারা। এইভাবে সংখ্যায় দিন দিন দলে কমে যাচ্ছে পাখির সংখ্যা। আবার যারা আসে বেঁচে থাকার নিরাপত্তার কারণে এই সব খালবিলে আসতে ভয় পায়। ঠাণ্ডার কবল থেকে বাঁচতে এসেই মৃত্যুর ভয় আবার চোরা শিকারিদের হাতে। বন্য প্রাণী দপ্তরের ঘুম না ভাঙলে শীত আসবে শীত যাবে পরিযায়ী পাখিদের দেখাও মিলবে না। রূপসী বাংলার বুকে জীবনানন্দের সেই সুর আর কি বাজবে!






                                                                                                                                                                                                                                                                                               
 ‘বুঝেছি শীতের রাত অপরূপ, মাঠে-মাঠে ডানা ভাসাবার  
গভীর আহ্লাদে ভরা; অশ্বত্থের ডালে-ডালে ডাকিয়াছে বক;
 আমরা বুঝেছি যারা জীবনের এই সব নিভৃত কুহক’...


No comments:

Post a Comment