ওয়েবডেস্ক, কথাবার্তা, রেজিনগর, ২৫ আগস্টঃ অাইন রয়েছে এক মাসের মধ্যে শংসাপত্র হাতে চলে আসার। কিন্তু বছর ঘুরলেও অনেক অবেদনকারী শংসাপত্র পাচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, চোদ্দ/পনেরো দফা কাগজ জোগাড় করতে গিয়ে স্কুল/কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে এলাকার নাগরিকগণের অনেকেই শংসাপত্র পাওয়া দূরঅস্ত অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্রের জন্য আবেদনই করতে পারছেন না!
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনপরিষেবা অধিকার আইন' ২০১৩ (West Bengal Right to Public Service Act, 2013), Section-3 এর Sub-Section(2) অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তরের জারি করা Memo no. 3755-BCW dated 8th Nov' 2013-এ সুস্পষ্টভাবে SC/ST/OBC আবেদনপত্র জমা দেওয়ার চার(৪) সপ্তাহের মধ্যে শংসাপত্র প্রদান করে দিতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। আর, কার্যত এই অাইনকে বুড়ো অাঙুল দেখানো হচ্ছে বেলডাঙ্গা-২ নং ব্লকের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যান দপ্তরে। এই আইনটি প্রচারের স্লোগান, "সময়ের সাথী/আপনার সাথে/পরিষেবা পান সহজে/সাথে সাথে" আজ ভূক্তভোগীদের কাছে কেবলই দেওয়াললিখন মাত্র!
সেইসঙ্গে, অযথা কাগজপত্রের জটিলতায় নাস্তানাবুদ করা হচ্ছে প্রায় প্রতিটি আবেগনকারীকেই। সপ্তাহ দুয়েক থেকে নিজের স্কুল পড়ুয়া মেয়ের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) শংসাপত্রের জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ডকুমেন্ট জোগাড় করছেন রেজিনগরের দোকানদার জিলানী সেখ। বেশ কয়েকদিন ব্যাবসার সব কাজ শিকেয় তুলে বহু কষ্টে জোগাড় করা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বেলডাঙ্গা-২ নং ব্লকের অফিসে জমা দিতে গেলে তাঁকে বলা হয় বাড়ির খাজনার রসিদ ছাড়া আবেদনপত্র জমা নেওয়া যাবে না। যদিও তিনি উক্ত কাগজের বিকল্প নথি (যেহেতু সরকারি মেমোতে বলা আছে 'land deed or land tax receipt') আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিলেন। ভাগীরথী নদী পেরিয়ে শক্তিপুর থেকে বাধ্য হয়ে রেজিনগরে ফিরে আসেন দোকানদার জিলানী সেখ। শুধু জিলানী একা নন। সপ্তাহে দুদিন-সোমবার ও বুধবারে ওবিসি আবেদনপত্র জমা নেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে এই ব্লকে। সব দিনই এক অবস্থা। আবেদনপত্র জমা করতে গেলেই এটা নেই, সেটা নেই করে নানাভাবে হয়রানির মধ্যে ফেলা হচ্ছে জনগণকে।
উল্লেখ্য, সরকারি আদেশনামা নং-1204-SBCW/MR-67/10 dt. 27-07-2015 স্পষ্টভাবে ওবিসি শংসাপত্রের জন্য পাঁচ ধরনের প্রমানপত্রের প্রয়োজনের উল্লেখ রয়েছে।এই মেমোরেন্ডামের '9' নম্বর অনুচ্ছেদের 9(a)নাগরিকত্ব (Citizenship) প্রমাণপত্র: সাতটির মধ্যে যে কোন একটি, 9(b)স্থায়ী বাসিন্দার(Permanent residence) প্রমাণপত্র: ছয়টি আইটেমের মধ্যে একটি,9(c)স্থানীয় বাসিন্দা(Local residence) সম্পর্কিত: দশটির মধ্যে যে কোন একটি প্রমাণপত্র; 9(d)জাতি পরিচয়(Caste Identity) সম্পর্কিত তিনটির মধ্যে যে কোন একটি; 9(e)পরিচিতির(Identity) জন্য আটটির মধ্যে যে কোন একটি অর্থাৎ সাকুল্যে মাত্র পাঁচটি কাগজ (যার মধ্যে একই ডকুমেন্ট একাধিক ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) হলেই ওবিসি শংসাপত্রের জন্য নির্দিষ্ট আবেদনপত্র (অনলাইনে জমা করা আবেদনপত্রের হার্ডকপি) জমা নেওয়া উচিত।
অথচ সরকারি এই আদেশনামাকে কা 'থোড়াই কেয়ার' করে বেলডাঙ্গা-২ নং ব্লক অনগ্রসর কল্যাণ দপ্তর চোদ্দ দফা কাগজের তালিকা টাঙিয়েছেন। এর উপরি আবার গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো যৌথ বিবৃতি, দশজন প্রতিবেশীর স্বাক্ষরিত ঘোষণাপত্র ইত্যাদি অদ্ভুত রকমের কাগজপত্র চাওয়া হচ্ছে। আঠারো বৎসরের নীচের বয়সীদের ক্ষেত্রে অভিভাবকের এফিডেভিট জমার নিয়ম থাকলেও এটা সব আবেদনকারীকেই দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে সরকারি অফিসে জমা দেওয়া কাগজপত্র স্বপ্রত্যায়িত হলেই চলবে এই মর্মে আদেশনামা জারি করলেও বেলডাঙ্গা-২ নং ব্লকে ওবিসি শংসাপত্রের জন্য জমা দেওয়া কাগজপত্র গেজেটেড অফিসার দিয়ে প্রত্যায়িত করা না থাকলে কোনভাবেই আবেদনপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।যা, জোগাড়ে হিমসিম খেয়ে ভাগীরথী খেয়াপারাপার করতে গিয়ে চোখের জলে, নাকের জলে অবস্থা আবেদনকারীদের।বেলডাঙ্গা-২ নং ব্লকের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যান দপ্তরের উপর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।
ওবিসি শংসাপত্র পেতে ব্লকের সাধারণ নাগরিকদের এই হয়রানি সম্পর্কে রেজিনগরের বিশিষ্ট শিক্ষক ও সমাজকর্মী সাবির চাঁদ জানালেন-"রাজ্য সরকার যখন এসসি/এসটি/ওবিসি শংসাপত্র প্রদানে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন, তখন বেলডাঙ্গা-২ নং ব্লকের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকগণ অযথা জটিলতা তৈরি করে সাধারণ মানুষকে হয়রানিতে ফেলছেন। যে সমস্ত কাগজপত্রের কথা সরকারি আদেশনামাতে জমা দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখই নেই, সে সমস্ত কাগজপত্র ওবিসি আবেদনকারীদের কাছে চাওয়া হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে আমরা আগামীদিনে ওবিসি শংসাপত্র প্রদানের এই অব্যাবস্থা নিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হব।"





No comments:
Post a Comment