ওয়েব ডেস্ক: বর্ষা শুরু হতেই পার্থেনিয়ামের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে। বৃদ্ধি একেবারে গাণিতিক হারে। গ্রাম থেকে শহরে সব জায়গাই আজকাল এই বিষাক্ত উদ্ভিদটি দেখা মেলে। প্রকৃত অর্থে পার্থেনিয়াম এক ধরনের বিষাক্ত আগাছা, যা মানুষ ও প্রাণী দেহে নানা ক্ষতি করে।
বাড়ির আশপাশে, রাস্তার ধারে, বন-জঙ্গলে বা ফসলের ক্ষেতে পার্থেনিয়াম জন্ম ও বিস্তার লাভ করে। এই বিষাক্ত উদ্ভিদটি সাধারণত উচ্চতায় ১ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ধনে পাতার গাছের মতো দেখতে ছোট ছোট সাদা ফুলে ভর্তি এই গাছটি। পার্থেনিয়াম শাখা বিস্তারের মাধ্যমে গম্বুজ আকৃতির অথবা ঝোপ আকারের হয়। পাতা শাখাযুক্ত ত্রিভুজের মতো। নির্দিষ্ট বয়সে ফুল ফোটে। একটি গাছ বাঁচে তিন থেকে চার মাস। এই সময়ের মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। গোলাকার, সাদা, আঠালো এবং পিচ্ছিল হয়ে থাকে এর ফুল। পার্থেনিয়ামের একটি গাছ ৪ থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে পারে। এই বীজ এতই ছোট যে সাধারণত গবাদিপশুর গোবর, গাড়ির চাকার কাদামাটি, পথচারীদের জুতোর তলার কাদামাটি, সেচের জল ও বাতাসের সঙ্গে এর বিস্তার ঘটে।
পার্থেনিয়ামের মূল উৎপত্তিস্থল মেক্সিকো। সেখান থেকে এই বিষাক্ত আগাছা ছড়িয়ে পড়েছে আমেরিকা, আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশেসহ বিভিন্ন দেশে। পার্থেনিয়ামের ইংরেজি নাম Perthenium এবং বৈজ্ঞানিক নাম Parthenium Hysterophorus.
পার্থেনিয়ামে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন বা বিষ, যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়াও এই বিষাক্ত আগাছা এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা কীটপতঙ্গ ও ফসল উভয়েরই ক্ষতি করে। পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয়। পার্থেনিয়াম আগাছাযুক্ত মাঠে গবাদিপশু চরানো হলে পশুর শরীর ফুলে যায়, তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এ ছাড়া পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে-পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাত-পা চুলকায়, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকে চর্মরোগের সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে পারে।
পার্থেনিয়াম গাছ দমন সমস্যা ও প্রতিকার :
১) এই আগাছার জঙ্গল পুড়িয়ে ফেলা যেতে পারে। কিন্তু সমস্যাও আছে । পোড়ানোর সময় এই গাছের রেণু উড়ে দূরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে সেক্ষেত্রেও ঐ গাছের বংশ বিস্তার বা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ঐ রেণু ঢুকে মানুষে ক্ষতি করতে পারে।
২) ঐ গাছ কেটে গভীরগর্তে পুতে ফেলা তাহলে রেণু ওড়ার সম্ভাবনা কম । কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে – যারা এই আগাছা কাটবে তারা আক্রান্ত হতে পারে। মানে একেবারে শাঁখের করাতের মতো অবস্থা।
৩) রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তথা আগাছানাশক ব্যবহার করেও এ আগাছা দমন করা যায়। এক্ষেত্রে স্পাইকার, গ্যালপ ইত্যাদি আগাছানাশক প্রতি ১০ লিটার জলে ১০০ মিলিলিটার গুলে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া প্রতি হেক্টরে দুই কেজি ২.৪ ডি সোডিয়াম লবণ জলে মিশিয়ে স্প্রে করেও এ আগাছা দমন সম্ভব।
৪) জৈবিক দমন প্রক্রিয়া পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হীন একটি ভালো ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে নানাধরণের পাতাখেকো বা ঘাসখেকো পোকার মাধ্যমে পার্থেনিয়াম গাছকে দমন করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
৫) তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিজের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আমাদের অসচেতনার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম এত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করছে।


No comments:
Post a Comment