22 July 2016

ধ্বংসের প্রতীক্ষায় বেলডাঙ্গার পরিত্যক্ত চিনির মিল



দীননাথ মণ্ডল :  সালটা ১৯৪৭। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে নোটিফিকেশন জারি করে দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। কারণ মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। এভাবেই বন্ধ হয়ে পড়ে বেলডাঙ্গা শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিল। ১৯৩৩ সালে শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিলস্ লিমিটেড বেলডাঙ্গাতে চামড়ার ট্যানারীর কারখানাকে সংস্কার করে এই সুগার মিল চালু করে। মিলের প্রয়োজনীয় আখের বেশী ভাগ আসত অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলা থেকে। তাছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ ১৯৩৬ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর, মাদাপুর, বানজেটিয়া, জীবননগর ও বহরমপুরে মোট ৪৭২.১ একর এবং নদীয়া জেলায় বেথুয়াডহরীতে ৪০৪.৭ একর জমি কেনে আখ চাষের জন্য। রমরমিয়ে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পাতা হয় রেললাইন মিলের ভেতর পর্যন্ত। উৎপাদিত চিনি সহজেই পৌঁছে যায় কলকাতায়।

দীর্ঘ ১৪ বছর চলার পর তেঁতো হয়ে যায় চিনির স্বাদ। কাজ হারায় অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে  মিল কর্তৃপক্ষ নিজেকে দেওলিয়া ঘোষনা করে। লিকুডেশনে কলকাতা হাইকোর্ট রিসিভার নিয়োগ করে। পশ্চিমবঙ্গের সরকারের পক্ষে কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ কিনে নেয় এবং সরকারি ভাবে চলানোর উদ্যোগ নেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল সুগার ডেভেলপমেন্ট করপরেশন লিমিটেড। নাগপুর থেকে কারখানা বিশেষজ্ঞরা এসে পরিকাঠামো প্রদর্শন করেন। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে সেই প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য মিলের যন্ত্রাংশের বেশিরভাগ সেই সময় সরিয়ে ফেলা হয়। পড়ে থাকে অন্তঃসারশূন্য এক বিশাল মিলের কাঠামো।
   

    এরপর কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ পাট শিল্পের জন্য ১৯৯৩ সালে চাপদানি কোম্পানিকে সেই মিল বিক্রি করে দেয়। চাপদানি কোম্পানি UNDP মাধ্যমে কাঁচা পাট ছাড়িয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাঁক দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। বর্তমানে মিলের পরিত্যক্ত কিছু জমিতে র‍্যামির ফাইবার চাষ হয় এবং এই সংক্রান্ত ছোট একটি প্রসেসিং ইউনিটও আছে মিলের অফিস ভবনে। তন্তু উৎপাদন করে সেখান থেকে সুতো  তৈরি করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া নামমাত্র। মিলের মূল ভবন বর্তমানে পরিণত হয়েছে ঝোপ জঙ্গলে। প্রাচীর ঘেরা একটা বিশাল এলাকায় কিছু আগাছা বুকে নিয়ে একটি তামার চিমনী মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে- বেলডাঙ্গা রেলস্টেশনের সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব দিকে ধ্বংসের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে। 

1 comment:

  1. So sad �� , please save it. It's a historical palace.

    ReplyDelete